পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা পৌরসভা মেয়রের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি পৌরসভার পাঁচটি শূন্যপদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অর্ধকোটি টাকার লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের ছাড়পত্রের আলোকে পৌরসভার শূন্যপদ পূরণে গেল বছরের ১৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মেয়র।
এরপর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর গলাচিপা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫টি পদে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ শেষে ফলাফল প্রকাশ করে রাতেই মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে এই পরীক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বেশ তড়িঘড়ি করা হয়েছে। ফলে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠে। শুধু ৫টি পদে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি অবৈধ ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার কর্মচারী, চাকরি প্রার্থী ও স্থানীয়রা।
গলাচিপা পৌরসভার কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি বাছাই কমিটির আহবায়ক পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিনের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ও বাসার কেয়ারটেকার মো. আরিফুর রহমানকে দারোয়ান পদে এবং শ্যালকের স্ত্রীকে নকশাকার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যের অনুপস্থিতিতে আবেদনপত্র যাচাই বাছাই করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন সদস্য।
নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- গলাচিপা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাছিম রেজা, পটুয়াখালী পৌরসভার সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাসুম বিল্লাহ ও শহর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইয়াসমীন।
চাকরি প্রার্থীদের আবেদনে অসঙ্গতি ও মিথ্যা তথ্য স্পষ্ট থাকার পরেও স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের বিনিময়ে তাদের লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়। প্রার্থীদের কুকৌশলে উর্ত্তীর্ণ দেখিয়ে রাতে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সকালে চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে আত্মগোপনে যায় মেয়র আহসানুল হক তুহিন।
জানা যায়, অসঙ্গতির আবেদনগুলোর মধ্যে দৃশ্যমান ৫ নম্বর পদের দারোয়ান পদে ৫০১ রোল নম্বরের প্রার্থী মো. আরিফুর রহমান। তিনি আবেদনের সঙ্গে বোয়ালিয়া বিপিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে ৮ম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সনদ জমা দিয়েছেন। তবে আবেদনের তথ্যে দেওয়া হয়েছে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.২৫ পেয়েছেন তিনি। যা উভয়টিই মিথ্যা, জাল ও ভুয়া। কারণ, ২০০৮ সালে কোন জেএসসি পরীক্ষা চালু হয়নি। আর পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ পদ্ধতি চালু হয়েছিল ২০১০ সালে। তারপরও নিয়োগকর্তা ও মেয়র কোন যাচাই-বাছাই না করে তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা আয়োজনসহ নিয়োগের আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।
এছাড়াও বিপিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সই জাল করে ঐ সার্টিফিকেটের ফটোকপি সত্যায়িত করতেও জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আকরামুজ্জামানের সীল ও সই জাল করা হয়েছে। যা সরাসরি গলাচিপা পৌরসভার মেয়রের নির্দেশে ভুয়া সীল তৈরি করে এসব ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আকরামুজ্জামান জানান, আরিফুর রহমান নামের এক ব্যক্তির এনআইডি ও সার্টিফিকেটে আমার সীল সই জাল করা হয়েছে। ঐ সীল সই আমার নয়।
আরও পড়ুন: নিয়োগ বাণিজ্য: ইবির দুই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
গত শনিবার রাতে গলাচিপা পৌরসভা ভবনের দ্বিতীয় তলায় আরিফুর রহমানকে ভুয়া সার্টিফিকেট ও জাল জালিয়াতির বিষয় জানতে চাইলে তিনি পালিয়ে চলে যান।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও পৌরসভার সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে আমি ছিলাম। তবে আমি এ পৌরসভায় অতিরিক্ত দায়িত্বে। তাই বেশি সময় দিতে পারেনি।
আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় সংযুক্ত কাগজ যাচাই করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাচাই করা হয়েছে কোন কথা থাকলে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আমি জানিনা।
এছাড়াও পটুয়াখালী পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইয়াসমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও গলাচিপা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাছিম রেজা বলেন, আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হলেও যাচাই- বাছাইতে ছিলাম না। শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সময় উপস্থিত ছিলাম। নিয়োগের বিষয়ে কোন কথা থাকলে আপনি মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
এ বিষয়ে গলাচিপা পৌরসভার কর্মচারী নিয়োগ ও পদন্নোতি বাছাই কমিটির আহবায়ক ও পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিনের সঙ্গে তার অফিসে, বাসায় এবং মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: নিয়োগ বাণিজ্য, দাতা সদস্যকে বাদ দিয়ে গোপন স্কুল কমিটি